ফেসবুক মার্কেটিং কি?
ফেসবুক মার্কেটিং হলো এমন একটি প্রক্রিয়া যা আপনাকে আপনার পণ্য বা সেবা সম্পর্কে ফেসবুক ব্যবহারকারীদের অবগত করতে সাহায্য করে।ফেসবুক মার্কেটিং এর মাধ্যমে বেশি সংখ্যক লোকের কাছে পণ্য সম্পর্কে ধারণা দেয়া হয় এবং বেশি পরিমাণ পণ্য বিক্রি নিশ্চিত করা যায়।ফেসবুক পেইজ ভিজিটরদের আগ্রহ ধরে রাখতে তাদের সাথে একটি যোগাযোগের মাধ্যম হিসেবে কাজ করে এবং বিজ্ঞাপনের মাধ্যমে পণ্য সম্পর্কে তথ্য প্রদান করাই হল এর প্রধান কাজ, যাতে পৃথিবীর নানা প্রান্তের মানুষ সেই পণ্য বা সাইট সম্পর্কে জানতে পারে। । প্রতিদিন প্রায় ১.৫ বিলিয়ন মানুষ একবার হলেও ফেসবুকে ঢুঁ মারেন।যা প্রতিমাসে এই সংখ্যাটা দাঁড়ায় ২.৩ বিলিয়নে। সেখানে প্রায় ৭ মিলিয়নেরও বেশি সক্রিয় কোম্পানি এই বিশাল দর্শকদের জন্য বিজ্ঞাপন তৈরি করে। এই সংখ্যাগুলো দেখেই বুঝা যায় ফেসবুক মার্কেটিং কি পরিমাণ গুরুত্বপূর্ণ। বর্তমান সময়ে ফেসবুক মার্কেটিং এর প্রক্রিয়া গুলো ব্যবহার করে যে কোনো ব্যবসা বা প্রডাক্ট, সার্ভিস প্রচার করাটা অনেক সহজ . এই Facebook marketing এর প্রক্রিয়াটি ডিজিটাল মার্কেটিং এর অনেক গুরুত্বপূর্ণ অংশ।
আপনি চাইলেই ফেসবুকের মাইক্রো-টার্গেটিং বৈশিষ্ট্যগুলো কাজে লাগিয়ে- লিঙ্গ, বয়স, অবস্থান, বা আগ্রহের উপর ভিত্তি করে সঠিক টার্গেট ভিজিটরদের কাছে আপনার পণ্যের বিজ্ঞাপন পৌঁছা দিতে পাড়েন।আর এটাই হল ফেসবুক মার্কেটিং।
কিভাবে ফেসবুক মার্কেটিং করবেন?
ফেসবুক মার্কেটিং সাধারণত ২ প্রকারে হয়ে থাকে। আর তা হলো ফ্রি ফেসবুক মার্কের্টিং এবং পেইড ফেসবুক মার্কের্টিং। ব্যবসার ধরণ অনুযায়ী ফ্রি এবং পেইড ফেসবুক মার্কের্টিং ব্যবহার করা হয়।
ফ্রি ফেইসবুক মার্কেটিং:
ফেসবুক মার্কেটিং সম্পকে যদি সহজ ভাবে বলি,ফেসবুক মার্কেটিং জন্য প্রথমে আপনার একটি ফেসবুক পেজ তৈরি করতে হবে। মনে করুন আপনি একটা জামার ব্যবসা আছে। তাহালে আপনি কিভাবে ফেসবুকে জামার বিষয়ে মার্কেটিং করবেন। এর জন্য প্রথমে আপনাকে জামার সাথে জড়িত একটি ফেসবুক পেইজ তৈরি করতে হবে । পেইজ তৈরি করা অনেক সহজ। তবে, পেইজ তৈরি করতে হয় সেই বিষয়ে যদি না জানেন তাহালে নিচের পয়েন্ট গুলো মনোযোগ দিয়ে পড়ুন।
- প্রথমে মার্কেটিং করার জন্য আপনার ব্রান্ড, বিসনেস, প্রডাক্ট, ওয়েবসাইট থাকতে হবে।
- এবার আপনার ব্যবসার নামে একটি ফেসবুক পেজ তৈরি করতে হবে।
- আপনার তৈরি করা পেজে বিসনেস এর প্রোফাইল পিকচার ও কভার ইমেজ দিয়ে আকর্ষণীয় করতে হবে।
- ফেসবুক পেজের description box এ বিসনেস বা ব্রান্ডের কিছু তথ্য লিখুন।
- পেজে Like বা Followers এর জন্য বন্ধুদের কাছ থেকে বা টাকা দিয়ে প্রমোড করুন।
- পেজে লাইক, ফলোয়ার বেশি পরিমানে হওয়ার পরে ব্যবসা বা ব্রান্ডের সাথে জড়িত ছবি, ভিডিও শেয়ার করুন।
- আপনি ব্যবসার বিভিন্ন প্রডাক্ট বা সার্ভিস গুলো ফেসবুক পেজে শেয়ার করে ইউজারদের জানাতে পারবেন।
- শেষে আপনি ফেসবুক পেজের প্রডাক্ট গুলো প্রচার বা মার্কেটিং করার জন্য ফেসবুকে টাকা দিয়ে পেইড মার্কেটিং করাতে পারবেন।
পেইজ সেটাপ শেষে যে পণ্যের মার্কেটিং করতে চান, তা আকর্ষণীয়ভাবে আপনার পেইজের পোস্টে তুলে ধরুন।তারপর পরিচিত সবাইকে আপনার পেইজ ফলো করার জন্য ইনভাইটেশন পাঠাতে পারেন এবং আপনি যে পোস্টটা দিয়েছেন তা নানান সোশ্যাল মিডিয়ায় শেয়ার করুন। চাইলে বন্ধুদেরও শেয়ার করতে বলতে পারেন। এভাবে কিন্তু কোনো অর্থ ছাড়াই অধিক সংখ্যক মানুষের কাছে প্রচারণা চালানো সম্ভব ৷ এর পাশাপাশি আপনার সার্ভিসের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ বিভিন্ন গ্রুপে যুক্ত হয়ে সেখানেও প্রচারণা চালাতে পারেন।
এখানে আরো কিছু ফ্রি মার্কেটিং আইডিয়া তুলে ধরা হল :
- লাইভ ভিডিও এবং ইভেন্ট তৈরি করা।
- সার্ভিসের সাথে মানানসই ওয়েবিনার চালু।
- ইন্ডাস্ট্রি বা নেটওয়ার্কিং ইভেন্টে যাওয়া।
- সোশ্যাল মিডিয়া কন্টেস্ট ও গিভ্যাওয়ের আয়োজন করা।
- কাস্টমার রেফারেল প্রোগ্রাম চালু।
ফ্রি ফেসবুক মার্কের্টিং এর সুবিধা ও অসুবিধা
সুবিধা | অসুবিধা |
পেইজ ও পোস্ট যত আকর্ষণীয় হবে, আপনার অর্গানিকভাবে ফলোয়ার বাড়বে এবং আপনাকে তত সহজে মনে রাখবে। | আপনার পোস্ট দেখার জন্য ইউজারদের সবসময় আপনাকে ফলো করতে হবে। |
অর্গানিক পোস্টের মাধ্যমে কাস্টমারদের সাথে কথাবার্তা যোগাযোগ করতে পারবেন। | অর্গানিক পোস্টের মাধ্যমে ইউজার টার্গেট করতে পারবেন না। |
যেসব জায়গায় পেইড মার্কেটিং পৌঁছায় না, সেসব ফ্রি মার্কেটিং পৌঁছে যাবে। | অনেক সময় লাইক ফলো করলেও আপনার পোস্ট ইউজারদের সামনে নাও আসতে পারে। সেক্ষেত্রে বারবার পেইজের নাম সার্চ দিয়ে দেখতে হবে। |
ব্র্যান্ড সচেতনতা বৃদ্ধি করে। | নির্দিষ্ট ক্যাটাগরির মানুষকে টার্গেট করতে পারবেন না। |
আশাকরি উপরের পয়েন্ট গুলো পড়ে Facebook marketing করার প্রক্রিয়া গুলো সম্পকে সহজে বুঝতে পারেছেন।
পেইড ফেইসবুক মার্কেটিং:
অর্থ প্রদানের মাধ্যমে ফেইসবুক পেইজ বুস্ট করে -লিঙ্গ, বয়স, অবস্থান, বা আগ্রহের উপর ভিত্তি করে সঠিক টার্গেট অডিয়েন্সের কাছে খুব দ্রুত পণ্যের বিজ্ঞাপন পৌঁছে দেওয়ার মাধ্যমে পেইড ফেইসবুক মার্কেটিং করা হয়।যেমন আপনি চান মিরপুরের ১৮ বছরের ঊর্ধ্বে সকল নারী বা পুরুষ তথবা শুধু নারী যেন আপনার পোস্টটি দেখতে পায়। এই কাজটা ফ্রি ফেইসবুক মার্কেটিং দিয়ে করা না গেলেও, পেইড মার্কেটিং দিয়ে খুব সহজেই করা য়ায়। ফেইসবুক নির্দিষ্ট সময়ের জন্য নির্দিষ্ট অর্থ প্রদানের মাধ্যমে বিজ্ঞাপন আকারে পেইজ এবং পোস্ট নির্ধারিত গ্রাহকের কাছে ফেইসবুকে উপস্থাপন করা যায়।
পেইড ফেসবুক মার্কের্টিং এর সুবিধা ও অসুবিধা
সুবিধা | অসুবিধা |
রেভিনিউ বৃদ্ধি করতে পারবেন। | সবসময় মনমতো রিচ নাও আসতে পারে। |
ইউজার টার্গেট করে নানা ক্যাটাগরিতে ভাগ করা যায় । | অ্যানালাইটিকসের পেছনে প্রচুর সময় ব্যায় হয়। |
বাজেট অনুসারে আপনার সেল বাড়াতে পারবেন। | কনভার্সন রেট কমে যেতে পারে। |
বিভিন্ন ফরম্যাটের পোস্ট নির্বাচন করতে পারবেন। | নির্দিষ্ট ক্যাটাগরির মানুষকে টার্গেট করতে পারবেন না। |
উপসংহার
ডিজিটাল মার্কেটিং জগতে ফেসবুক মার্কেটিং খুবই কার্যকরী একটি মাধ্যম। কিছু না করে বসে আছেন মানে আপনি অন্যদের থেকে পিছিয়ে আছেন। তাই দেরি না করে দ্রুত ফেসবুক মার্কেটিং শুরু করুন।
তবে, এই বিষয়ে যদি কোনো প্রশ্ন থাকে তাহালে নিচে কমেন্টে জানাতে পারেন। আর আমার লেখা ফেসবুক মার্কেটিং বাংলা টিউটোরিয়াল যদি আপনার কাছে ভালো লাগে তাহালে বন্ধুদের সাথে শেয়ার করতে ভুলবেন না।