ইউটিউব এসইও

ইউটিউব ভিডিও এসইও (SEO) কিভাবে করতে হবে?

ইউটিউব ভিডিও SEO কি ?

ইউটিউব seo র বিষয়ে জানার আগে আপনাদের SEO কি তা জানতে হবে। SEO  হলো “সার্চ ইঞ্জিন optimization” যার কাজ হলো আপনার অনলাইন কনটেন্ট যেমন “ওয়েবসাইট”, “ভিডিও”, বা যেকোনো ফাইল সার্চ ইঞ্জিন গুলিতে টপ ১০ (প্রথম ১০) টি রেজাল্টের ভেতরে দেখানো। সার্চ ইঞ্জিন বলতে আমরা বিশেষকরে “গুগল”, ইয়াহু,বিং এবং ইউটিউবের ভিডিও সার্চ বুঝি।

এইযে আপনি হয়তো গুগলে “ইউটিউবের SEO” র ব্যাপারে কিছু জানতে সার্চ করেছেন আর আমার এই ব্লগের আর্টিকেল খুঁজে পেয়েছেন। তাই তো ?

কিন্তু কেন ? গুগল বা যেকোনো সার্চ ইঞ্জিনে একি বিষয়ে হাজার হাজার ব্লগ বা ওয়েবসাইট রয়েছে . তাহলে তাদের বাদ দিয়ে কেবল আমার ব্লগের আর্টিকেল কেন প্রথমে খুঁজে পেলেন ? কেন একি বিষয়ে অন্য লেখা বা  আর্টিকেল সার্চ রেজাল্টে প্রথম ১০ রেজাল্ট এর ভেতরে দেখানো হয়নি ?

এর কারণ হলো SEO . এস ই ও করার জন্য গুগল এটা সহজে বুজেগেছে যে আপনি যেই প্রশ্ন সার্চ করেছেন সেটার উত্তর আমার আর্টিকেলে ভালো ভাবে দেয়া আছে। এবং তাই, গুগল আমার আর্টিকেল পেজ প্রথম ১০ টি সার্চ রেজাল্টের ভেতরে রেখেছে। ঠিক সেরকম, আপনি নিজের ইউটিউবের চ্যানেল বা ভিডিওতে সঠিক ভাবে এস ই ও ব্যবহার করলে গুগল সার্চ বা ইউটিউবের ভিডিও সার্চ আপনার আপলোড করা ভিডিওর ব্যাপারে বেশি ভালো করে বুঝতে পারবে এবং আপনার ভিডিওর সাথে জড়িত কোনো শব্দ কেও সার্চ করলে “YouTube ভিডিও সার্চে” আপনার ভিডিও সবচে প্রথমেই দেখানো হবে।

ইউটিউব ভিডিও কেন SEO করা জরুরী?

যে বিষয় নিয়ে আপনি ভিডিও বানিয়েছ সেই বিষয়ে একটি বার ইউটিউবে সার্চ করে দেখুন ,দেখবেন আর অনেক ভিডিও দেখা যাচ্ছে।তাহালে আপনি যে বিষয়ে ভিডিও তৈরি করবেন সেই বিষয়ে যদি আগে থেকে ভিডিও থাকে তাহালে আপনার ভিডিও বানিয়ে লাভ কি? তাই না? আসলে সে রকম কিছুনা -আপনি যদি ভিডিও তৈরি করে ইউটিউব এলগোরিদম (YouTube algorithm) কে এটা বুঝাতে পারেন যে বিষয়ে আপনি ভিডিও তৈরি করেছেন সেটা অন্যদের থেকে ভালো তাহালে আপনি ভিডিওতে ট্রাফিক পাবেন এবং টপ ১০ (প্রথম ১০) টি রেজাল্টের ভেতরে থাকতে পারবেন।

আর যদি ইউটিউব ভিডিও SEO না করে থাকেন, তাহলে YouTube কোনদিনই এইটা বুঝতে পারবেনা যে আপনার ভিডিওর বিষয় কি বা কখন কাকে আপনার ভিডিও দেখানো উচিত। তাহলে, এখন হয়তো আপনি ভালোকরে বুঝেগেছেন যে ইউটিউবের ভিডিওতে SEO করাটা কেন জরুরি।

YouTube ভিডিও কিভাবে এস ই ও (SEO) করবেন ?

বর্তমানে গুগল ও ইউটিউবের অ্যালগারিদম অনেক কঠিন। যা ভেদ করা অনেক কঠিন। এই সম্পর্কে একমাত্র গুগলের কর্মকর্তাগনই অবগত। তবে গুগল ও ইউটিউব অনেক ধরনের নিয়মের মাঝে তারা বুঝিয়ে দিয়েছেন যে, কিভাকে আপনার ইউটিউবে কাজ করবেন।

১. ভিডিও টপিক বা keyword রিচার্জ:

কিওয়ার্ড হচ্ছে এমন একটি শব্দ যে শব্দ একটি ওয়েব পেজ বা ইউটিউব ভিডিও কে বর্ণনা করে। সহজভাবে বলতে গেলে, গুগলে বা অন্যান্য সার্চ ইঞ্জিনে যা সার্চ করা হয় করা হয় তাই হল কিওয়ার্ড।যেমন: আপনি হয়তো গুগল থেকে” ইউটিউব এসইও” লিখে সার্চ করে আমার এই ওয়েব পেজে এসেছেন। আর এই ” ইউটিউব এসইও” এটাই  হল একটি কিওয়ার্ড।অথাথ আমরা যা লিখে সার্চ করি তাই হল এক একটি কিওয়ার্ড। (ফ্রি ও পেইড) ২টি মাধ্যমে কিওয়ার্ড রিসার্চ করতে পারবেন।

এখানে (ফ্রি ও পেইড)  কয়েকটি জনপ্রিয় টুলস আমি উল্লেখ করে দিচ্ছি।

  • Google Keyword Planner (Free)
  • Google Trends (Free)
  • TubeBuddy (Chrome Extendsion) (Freemium)
  • Ahrefs Keywords Explorer (Paid)
  • Semrush (Paid)
  • keywordtool.io (Free)

ProTips: কিওয়ার্ড নির্বাচনের বেলায় আপনাকে একটা বিষয় মাথায় রাখতে হবে যাতে আপনার কাঙ্খিত কিওয়ার্ডের কম্পিটিশন কম থাকে  এবং সেইসাথে সার্চ ভলিউম বেশি থাকে।

২. description এবং title এ keyword এর ব্যবহার করুন:

সবথেকে জরুরি এবং লাভ জনক নিয়ম হলো নিজের ভিডিওর description এবং title এ focused keyword এর ব্যবহার। ভিডিও টাইটেল এবং ডেসক্রিপশনে keyword বা বিষয় গুলি লিখে দিতে হবে , এমন ভাবে লিখতে হবে যাতে Google / YouTube সহজে পড়ে বুঝতে পারে আপনার তৈরি ভিডিও এর বিষয়বস্তু। তবে keyword এর বেশি ব্যবহার করবেননা। সাধারণ ভাবে ২ বা ৩ টি কীওয়ার্ড ব্যবহার করে টাইটেল বা ডেসক্রিপশন লিখবেন।

ইউটিউব এসইও
  • নিজের ভিডিও ডেসক্রিপশনে মিনিমাম ২৫০ থেকে ৩০০ টি শব্দৰ ব্যবহার করবেন।
  • ভিডিওর টাইটেল ২৫ টি শব্দৰ ভিতরে রাখবেন।
  • নিজের focus keyword ২ থেকে ৩ বার ব্যবহার করবেন

৩.ভিডিওতে SEO TAGS (ট্যাগ্) এর ব্যবহার:

যদি আপনার ভিডিওর টপিক, বিষয় বা কীওয়ার্ড YouTube SEO Tips এর সাথে জড়িত (related) তাহলে আপনারা এরকম কিছু tags ব্যবহার করতে পারবেন।

YouTube seo optimization, seo YouTube video, YouTube search engine, youtube video seo, video search engine.

Targeted tags কেবল আপনার ভিডিও ইউটিউবে রাংক (rank) করতে সাহায্য করা ছাড়াও tags এর মাধ্যমে আপনার ভিডিও রিলেটেড ভিডিও লিস্টে দেখাবে। এতে আপনার ভিডিওতে আরো বেশি ভিসিটর্স আসার সুযোগ বেড়ে যায়।

৪. আপলোড করার আগেই Video file name change করুন:

video file নাম change করে সেখানে ভিডিওর সাথে জড়িত SEO friendly নাম ব্যবহার করবেন। আমরা যখন একটি ভিডিও রেকর্ড করি বা বানাই সেই ভিডিও ফাইলের নাম বেশিভাগ m00000.avi, video.232.mp4 বা এরকম default ফাইল নামে থাকে।

যদি আপনারা নিজের ভিডিও ইউটিউবে এই ডিফল্ট ফাইল নামের সাথেই আপলোড করে দেন তাহলে সেটা SEO জন্য অনেক খারাপ এবং এতে আপনার SEO সম্পুনরুপে করা হবে না।

৫.লম্বা ভিডিও প্রকাশ করুন:

আপনি যদি আপনার ইউটিউব ভিডিওতে আপনার কম্পিটিটির এর চাইতে বেশিক্ষণ সময় আপনার ভিডিওতে ভিউআর কে ধরে রাখতে পারেন তবেই আপনার ইউটিউব ভিডিও ইউটিউব সার্চ ইঞ্জিনে রেঙ্ক করবে।এজন্যই ভিউআর কে ধরে রাখার জন্য লম্বা ভিডিও প্রকাশ করা জরুরী।

আপনার ইউটিউব ভিডিওর ওয়াচ টাইম বেশি হওয়ায় গুগোল খুব সহজেই বুঝে নিবে যে আপনার ভিডিওতে ভালো কিছু রয়েছে। আর সেজন্যই কম্পিটিটর এর চাইতে আপনার ইউটিউব ভিডিওতে ভিউয়াররা বেশি সময় দিচ্ছে।

উদাহরণস্বরূপ: আপনি একটি ভিডিও ১০ মিনিটের প্রকাশ করলেন, এবং আপনার কম্পিটিটর একটি ভিডিও ৫ মিনিটে প্রকাশ করল। ধরুন, এই দু্ইটি ভিডিও ভিউয়াররা ২০ পার্সেন্ট করে দেখলো। তাহলে হিসাব গিয়ে দাঁড়ালো আপনার ভিডিও ভিউয়াররা ২ মিনিটি দেখলো এবং আপনার কম্পিটিটর এর ভিডিও ১ মিনিটি দেখল।

৬.আকর্ষণীয় থাম্বনেইল ব্যবহার

ভিডিও টপিক অনুযায়ী একটি আকর্ষণীয় ইউটিউব ভিডিও থাম্বেল তৈরি করতে হবে। একটি থাম্বনেইল একটি ইউটিউব ভিডিও সম্পর্কে ধারণা দিয়ে দেয় দর্শককে ভিডিও দেখার আগে থেকেই । আপনি যদি আকর্ষণীয় থামনেল তৈরি করতে না পারেন, তাহলে আপনি অভিজ্ঞ কোন গ্রাফিক্স ডিজাইনার কে হায়ার করতে পারেন আপনার ইউটিউব ভিডিও এর থাম্বনেইল তৈরি করার জন্য।

তাছাড়াও আপনি ইউটিউব ভিডিও এর থাম্বনেইল অনলাইনে গ্রাফিক্স ডিজাইন ওয়েবসাইট Canva.com এর মাধ্যমে খুব সহজেই একটু বুদ্ধি খাটিয়ে প্রফেশনাল ভাবে ইউটিউব ভিডিও এর থাম্বনেইল তৈরি করতে পারবেন। ইউটিউবে সার্চ করে বিগেনার লেভেলের ক্যানভা এর ভিডিও দেখতে পারেন।

৭.ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করতে বলুন:

ইউটিউব ভিডিও দেখার সময় দর্শকরা যখন ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করে, তখন ইউটিউব সার্চ ইঞ্জিন এর কাছে একটি পজেটিভ সিগন্যাল যায়। চ্যানেলটি সাবস্ক্রাইব হলে,  তখন এই এংগেজমেন্টের কারণে ইউটিউব সার্চ ইঞ্জিনের কাছে একটি বার্তা যাবে যে, এই ইউটিউব ভিডিওটি ব্যবহারকারীদের চাহিদা পূরণ করতে সক্ষম। এই কারণে আপনার ইউটিউব ভিডিওটি ইউটিউব সার্চ ইঞ্জিনে রেঙ্ক করার সম্ভাবনা বেড়ে যাবে।

এটি খুব একটি সহজ ব্যাপার  কোন চ্যানেল দর্শকের কাছে যখন ভালো লাগে বা তার চাহিদা পুরন হয় তখন ই তারা ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করে। ইউটিউব এটি খুব ভালো করে বুঝতে পারে যে একজন ভিওয়ার কিসের জন্য একটি ইউটিউব চ্যানেল টা সাবস্ক্রাইব করে।তাই আপনার ইউটিউব ভিডিওতে ভিওয়ারদের আপনার চ্যানেল কে সাবস্ক্রাইব করতে বলুন।

৮.ভিডিও প্রকাশের সঠিক সময় নির্বাচন করুন

আপনার ইউটিউব ভিডিও রেঙ্ক করার ক্ষেত্রে সময়টা অনেক গুরত্বপূর্ণ  । তাই আপনাকে বুঝে শুনে আপনার অডিয়েন্সের সময় বুঝে ভিডিও আপলোড করতে হবে ।

যেমন ধরুন আপনি বাংলাদেশ টার্গেট করে ইউটিউব ভিডিও তৈরি করেন। এখন যদি আপনি আপনার ইউটিউব ভিডিও রাত ১:০০ সময় আপলোড করেন তাহলে কেমন হবে?

তাহলে অবশ্যই আপনার টার্গেট অডিয়েন্স সঠিকভাবে অনলাইনে আপনি পাবেন না। আর আপনি যদি আপনার সন্ধ্যা ০৭ টার দিকে আপলোড করেন তাহলে কেমন হবে?

তাহলে অবশ্যই আপনার টার্গেট অডিয়েন্স বেশি পাওয়ার সম্ভবণা থাকবে। তারা যখন আপলোড হওয়ার শুরুতে আপনার ভিডিও লম্বা সময় দেখবেন, লাইক, শেয়ার করবেন তখন আপনার ইউটিউব ভিডিওতে ইউটিউব এসইও এর ভালো প্রভাব পড়বে। আপনার ভিডিওতে বেশি ভিউ আসার পাশাপাশি ভাইরাল হবার সম্ভবনা বেড়ে যাবে।

শেষ কথা,

ইউটিউব ভিডিও এসইও সম্পূর্ণ পোস্টটি পড়ার জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ। আশা করি যে আপনাদের, ইউটিউব SEO কি এবং ইউটিউব ভিডিওতে এস এ ও (SEO) কিভাবে করবো সেটা ভালো করে বুঝিয়ে বলতে পেরেছি। আপনার যদি “YouTube Video SEO Bangla” সম্পর্কিত কোন প্রশ্ন থাকে তাহলে আপনি আমাদেরকে নিচের কমেন্ট বক্সে কমেন্ট করে জানান।

আর অবশ্যই আমাদের পোস্টটি ভালো লাগলে আপনার বন্ধু-বান্ধব এবং অনলাইনে ইনকাম করে প্রার্থীদের সাথে শেয়ার করবেন। আপনাদের মন্তব্য ও শেয়ার আমাদের কাজ করাকে অনুপ্রাণিত করে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *